বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৫২ অপরাহ্ন

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি নভেম্বরে

নিজস্ব প্রতিবেদক:: নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নভেম্বর মাসেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে জানিয়েছেন পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন।

নেপালের আপার কার্নালীর একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, সেখান থেকে আসবে ওই ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করবে ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর (গ্র্যান্ধি মালিকা অর্জুনা রাও)। বিদ্যুতের দর পৌনে ৬ টার মতো হতে পারে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সুত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার প্রথমে সরাসরি নেপালের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারতীয় আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে তৃপাক্ষিক চুক্তির প্রক্রিয়া শেষ পর‌্যায়ে নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ চুক্তি করবে ভারতীয় এনভিভিএন (বিদ্যুৎ ভাইপার নিগম লিমিটেড) সঙ্গে আর তারা চুক্তি করবে জিএমআর’র সঙ্গে। এর আগে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতেও এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। ত্রিপুরা রাজ্য সরকার সরাসরি দিতে রাজি থাকলেও তখন কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি করা হয়। তখন একে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের অপরিপক্কতা বলে মন্তব্য করেছিলেন কেউ কেউ। বিশেষ করে সরাসরি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা গেলে কিছুটা হলেও সাশ্রয়ী দর হতে পারতো।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে শীত -গরমে চাহিদার বিশাল তারতম্য। আবার দিন ও রাতের চাহিদার মাধ্যেও পার্থক্য তুলনামুলক বেশি। গরমের মৌসুমে যেখানে চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উঠে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে শীতের চাহিদা ৫ থেকে ৬ হাজারের নেমে আসছে। তখন বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকায় কাড়ি কাড়ি টাকা গুনতে হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে। এতে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে জ্যামিতিক হারে। দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।

শিল্পে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো গেলে এই সংকট কিছুটা কমে আসতো। করোনার কারণে সেদিকে আশানুরূপ অগ্রগতি হয় নি। আরেকটি চমৎকার বিকল্প ছিল নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানি। বাংলাদেশ এবং নেপালের চাহিদার চিত্র পুরোপুরি বিপরীত। নেপালে শীতে যখন হিটিং লোড বেড়ে যায়, তখন তাদের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কমে যায় লোডশেডিং হয়। ঠিক সেই সময় বাংলাদেশে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র অলস বসে থাকে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশে, নেপালেও এতে সায় ছিল। তারা গরমের মৌসুমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে, আবার শীতের মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করবে। ভারতের আপত্তিতে এই ভাবনা থমকে গেছে।

মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে হলে ভারতের মাধ্যমেই করতে হবে। সে কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডেকে (পিডিবি) সম্ভাব্য সকল বিকল্প দেখতে বলা হয়েছে। এই বিকল্পের মধ্যে ভারতের উত্তরাঞ্চলে রপ্তানির বিষয়েও সাম্ভাব্যতা যাচাই করতে বলা হয়েছে।

নেপালের এই বিদ্যুৎ কবে নাগাদ দেশে আসতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ৫ থেকে ৬ বছর সময় লাগবে। ততোদিন হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। সেভাবেই পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হলে অনেক সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন আমাদের জমি সংকট রয়েছে, আবার জ্বালানির প্রাপ্যতা নিয়েও নানান সংকট মোকাবেলা করতে হয়। পাশাপাশি পরিবেশের ইস্যুতো থাকেই। আর তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্যতো জ্বালানি আমদানির করতে হয়। তার চেয়ে ফিনিস প্রোডাক্ট আমদানি অনেক দিক থেকে সুবিধাজনক। ঝাড়খন্ডে একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। সেখান থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ আসবে বাংলাদেশে। ওই বিদ্যুতের ল্যান্ডিং স্টেশন হবে বড়পুকুরিয়া সে কারণে উত্তরাঞ্চলের সরবরাহ ঘাটতি মোকাবেলায় ভালো ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। ১ হাজার মেগাওয়াট কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে, ১৬০ মেগাওয়াট কুমিল্লা হয়ে আসছে। আমদানিসহ বিদ্যুতের মোট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে (ক্যাপটিভ ছাড়া) ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ (২৭ এপ্রিল ২০২১) বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট। সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের সাফল্য পিলে চমকানোর মতো। শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রাপ্তে রয়েছে বাংলাদেশ। অনেক দুর্গম অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে যা ওই এলাকার বাসিন্দারের কল্পনার মধ্যেও ছিল না।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্ট ড. শামসুল আলম বলেছেন, যে অসম নিয়ন্ত্রণ পলিসি দ্বারা ভারত বিদ্যুৎ আমদানির উপরে আরোপ করেছে, বাংলাদেশের এটা নিয়ে কূটনৈতিক লড়াই করা উচিৎ। দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে গেলে এই অসম পলিসি টেকার কথা না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com